Description
একটি মুহূর্তের ভেতর যা কিছু থাকে, সবই যে চলে যাওয়া বা সরে যাওয়ার জন্যে আসে, তা তো নয়। এমন অনেক কিছুই আছে যা মুহূর্তের মধ্যে আসে এবং মুহূর্তটি সরে যাওয়ার পরেও রয়ে যায়। এই থেকে যাওয়ার ব্যাপারটা বেশ রিনরিনে। মানে অনেকটা গানের ধুঁয়োর মতো। কিংবা জল সরে গেলে যেমন জলছবি পড়ে থাকে অনেকটা তেমনই। জলছবি বা জলছাপ। সেই ছাপ বা ছবি দেখে আসল জলের কল্পনায় যেতে পারি না হয়তো। কিন্তু সেই ছবি থেকে প্রায় সময়েই আমরা অন্য একটা স্মৃতি বা অনুভবের কল্পনায় চলে যাই। প্রমিতা ভৌমিক-এর ‘অন্ধকার লিখে রাখি’ এমনই এক কাব্যগ্রন্থ যা মুহূর্তকে সংলগ্ন করে তার বিপরীত মুদ্রার সাথে। আপাতভাবে যা ছিল প্রেমের অনুভব সেটাই তার বিপরীত অনুষঙ্গে হয়ে ওঠে বিষাদ-প্রতিম। কখনো তা বিরহের কথা বলে, কখনো পরিত্যাগের। জাপানি কবিরা, মুহূর্তের এই জলছাপ রেখে যাওয়ার ব্যাপারটাকে কবিতায় আনতে পেরেছিলেন। এবং মাত্র তিন লাইনের কবিতায়। জাপানি কবি বাশো এই ফর্মটার পথিকৃৎ ছিলেন। সাহিত্যের পরিভাষায় আমরা যাকে হাইকু নামে চিনি। তবে হাইকু-র ক্ষেত্রে মুহূর্তের অন্তরাত্মায় পৌঁছোনোটাই তার একমাত্র বৈশিষ্ট্য নয়। চোদ্দটি সিলেবল-এর মধ্যে কবিতাকে বেঁধে ফেলাটাও সমান গুরুত্বের। জাপানি বর্ণবিধি অনুযায়ী সেটা হয়তো অনায়াস ছিল। কিন্তু বাংলায় এই প্রায়োগিক দিকটা মেনে লেখা অবশ্যই কঠিন। প্রমিতা ভৌমিক তাঁর ‘অন্ধকার লিখে রাখি’ কাব্যগ্রন্থে হাইকু-র আত্মা ও তার তিন লাইনে ভাবপ্রকাশ যথার্থ ব্যবহার করেছেন। তিনি নিজে এ-বইকে হাইকু সংকলন বলেননি যদিও। কিন্তু কবিতাগুলির সার্থকতা এই জায়গায়, যে মুহূর্তকে ছুঁয়ে থেকেও তারা অন্য কোনো ভাবনার বীজ সেই মুহূর্তের মধ্যে আবিষ্কার করতে পারে। এবং সেটা প্রকাশ করতে পারে অত্যন্ত সুচারুভাবে। প্রমিতা-র কবিতায় এক সহজ সুর আছে। সেই সুর নানান অনুভব-প্রবাহকে একটি সুতোয় গাঁথে। সে অনুভবপ্রবাহ মুহূর্ত-নির্ভর। মাত্র তিন লাইনের শাসনে তিনি এই প্রবাহকে ধরেছেন এক অদ্ভুত কুশলী দক্ষতায়। আর তার ফলে, এই বইটির প্রায় সব কবিতাতেই, একভাবে দেখলে, যেমন জীবনের কোনো না কোনো ঘটনার দিকে তিনি ইঙ্গিত করেন, ঠিক তেমন করেই ঘটনার থেকে তার নির্যাসটুকু তুলে নিয়ে এইসব কবিতার শরীরে ছড়িয়ে দেন। সেই নির্যাস তখন কবিতার ধরা-অধরা পটভূমিতে নতুন আলোর উদ্ভাস নিয়ে আসে। কবি হিসেবে এখানেই প্রমিতার স্বকীয়তা। ‘অন্ধকার লিখে রাখি’ এখানেই অন্য বইগুলি থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। প্রমিতা লেখেন, “এসো, এবার অন্ধকার লিখে রাখি / সোঁদা গন্ধ মিশে যাক শরীরের বাঁকে, / তারপর আর মিথ্যে বোলো না কখনো।” যে কবি মাত্র তিন লাইনে, এই সামান্য কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করেই এমন একটি সম্পূর্ণ মিলন দৃশ্য লিখে রাখতে পারেন, তাঁর কবিতা যে আমাদের টানবে এটাই তো স্বাভাবিক।
Additional information
Author | |
---|---|
Binding | |
ISBN | |
Edition | |
Language | |
Page Count | |
Publisher | Hawakal Publishers |
Publish Date |
Reviews
There are no reviews yet.