Muse-er Bakwas

125.00

In stock

Categories: ,
Share this

Description

ধরা যাক যৌনতা, প্রেম, আর কবিতা একবার এক গোপন লেনদেনে জড়িয়ে পড়ল। কিংবা, ব্যাপারটা ঠিক ততটা গোপন নয়। কিছুটা প্রকাশ্যে, আর কিছুটা লুকিয়ে, এ ওকে ফুসলাচ্ছে, প্রভোক করছে, কানে কানে ফিসফিস করছে, আবার মাঝে মাঝে রাগে ফুঁসছে, চাইছে আঘাত করতে, আবার হয়তো ভালোবাসায় আর আদরে নিজেকে ঢেলে দিতে চাইছে। তো তেমন কিছু হলে সেই লেনাদেনার ভাষাটা কেমন হতে পারে আজকের দিনে? সে ভাষা কি চিরাচরিত যে কাব্যভাষা সেটাতেই লেখা হবে? কিন্তু আজকের পাঠকের কাছে সে ভাষা কীরকম যেন ন্যাকা আর আলুনি বলে মনে হয়, তাই না? কোনো ধোঁয়া ধোঁয়া কথার আবছা প্রকাশে এই শরীরী কথোপকথন ধরে রাখা কি আদৌ সম্ভব? মনে হয়, সম্ভব নয়। যৌনতা, প্রেম, আর কবিতার এই তোলপাড় করা ভাব বিনিময়কে ধরতে হলে একেবারে নতুন কোনো প্রকাশভঙ্গি নিয়ে আসতে হবে। সেটা হয়তো এমন কোনো শব্দকে ব্যবহার করবে কবিতার শরীরে যা তথাকথিত সাহিত্যের বাগবিধিতে একেবারেই বরদাস্ত করা হয় না। কিন্তু তাতে কী বা আসে যায়! কবি অর্ঘ্য দত্ত সেইসব বিধি নিষেধের পরোয়া করেন না। তিনি অবলীলায় লিখতে পারেন, “কুমন্ত্রণা? কে জানে কার মন! / পাহাড় ভারি বজ্জাত হয়, জানেন? / কবিতা দেয় পতন বিনিময়ে / কুয়াশানীল অভিসন্ধি আঁটে // বাইকের সিট ছলচাতুরি জানে / পথের মাঝে পাগলপারা চুমু / অনেকদূরে পুড়বে তখন কিছু / আপনার আবার সে-সবই সঞ্চয় // (আমার কি আর গতরদাহ মানায়!) / মিউজের কি গতরদাহ মানায়?” বৈষ্ণব পদাবলী মনে পড়ে গেল তো! সেই যে “প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর?” মনে পড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই শরীরী জ্বালাকে ‘গতরদাহ’ দিয়ে প্রকাশ করার কথা জীবনেও কল্পনা করেছিলেন! করেননি। আর এখানেই ‘মিউজের বক্‌ওয়াস’-এর কবি অর্ঘ্য দত্ত-র স্বকীয়তা। গতরদাহ-র মতো একটা শব্দ যা আসলে দুটো প্রাকৃত শব্দকে একসাথে জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হল সেটা অব্যর্থভাবে প্রেমের দহনকে যতটা বোঝায়, ততটাই তার অসহায়তাকেও প্রকাশ করে। গ্রিক পুরাণের মিউজ কবিকে অনুপ্রাণিত করে কবিতা লিখতে। বাস্তবের মিউজ নিজে প্রেমের দহনে জ্বলে, কিন্তু একথাও জানে যে কবির কাছে তাঁর প্রয়োজন ওই কবিতার জন্ম দেওয়ার জন্যেই। তাঁর বেশি কোনো অধিকার তাঁর নেই।

মিউজের বকওয়াস এমন এক কাব্যগ্রন্থ যার প্রতিটা লাইনের আড়ালে বারুদ ঠাসা আছে। সামান্য ঘর্ষণেই যা জ্বলে উঠতে পারে। দাবানল হয়ে সে আগুন ছড়িয়ে পড়তেও পারে। যৌনতার, শরীরী আদরের প্রকাশ এই বইয়ের প্রতিটি কবিতার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে। এমন সব ছবি ছড়ানো আছে এ বইয়ের প্রায় সব কবিতায় যা সরাসরি আদরের কথা বলে। এই বইয়ের আর একটা বিশেষত্ব এই যে কবি এখানে বাংলা শব্দের পাশাপাশি এমন অনেক শব্দ রাখেন যা হিন্দি বা ইংরেজি ভাষা থেকে নেওয়া। কিন্তু এই শব্দ ব্যবহার কোথাও এতটকু টাল খায় না। কখনও মনে হয় না কিছু একটা অসঙ্গতি আছে। তিনি লেখেন, “তোমাকে পাই না বলে ইচ্ছা হয় ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলি / যা কিছু সাধের আছে, থাক শুধু খুদখুশি-দিল।” কবিতাগুলিতে কামনার তীব্রতা যতটা আকুল, ঠিক ততটাই গভীর তার নিঃসঙ্গতার প্রকাশ। এই বইটি তাই শেষ অবধি প্রণয়ের প্রতিটি স্তর পেরিয়ে যেতে পাঠককে এই উপলব্ধিতে পৌঁছে দেয়, যেখানে দেহ আর মনের সব তৃষ্ণা আর দহনকে ছাপিয়ে কবিতার শুদ্ধ স্বর জেগে ওঠে।