Pornography

(1 customer review)

165.00

In stock

Categories: ,
Share this

Description

‘পর্নোগ্রাফি’-র কবি বুদ্ধদেব হালদার চাঁছাছোলা, প্রত্যক্ষ এবং ব্যতিক্রমী। সমাজ ও সম্পর্কের অবক্ষয়কে তিনি যেভাবে দেখছেন, অনুভব করেছেন, সেভাবেই দেখাতে চান তিনি। প্রকাশে রাখঢাক করা তাঁর একেবারেই না-পসন্দ। প্রেম, প্রেম থেকে ভাঙন, ভাঙন থেকে বিচ্ছিন্নতা, সব কিছুই তাঁর কবিতায় এমন এক কেয়ার-করি-না মনোভাব নিয়ে আসে, যাতে কবিতা হয়ে ওঠে বরফের ছুরির মতো ধারালো, বাতাস কেটে চাবুকের ওঠাপড়ার মতো নির্মম। এক ভেঙে যাওয়া ভালোবাসার কথা লিখতে গিয়ে তিনি অনায়াসে বলেন, “তুমি এবং আমি, যথাক্রমে একে অন্যকে ভুলে যাব খুব সহজেই / তারপর, তোমার-আমার এই দাঁতে-দাঁত চেপে বেঁচে থাকাগুলো / একদিন আপলোড / হয়ে যাবে সস্তার কোনো এক্স-চ্যানেলে। / পুড়ে যাওয়া মানুষেরা বলবে, এটাই শতাব্দীর শেষ পর্নো।” বুদ্ধদেব-এর কবিতা এক কথায় আমাদের সময়ের এক আর্বান ভাষ্য। কবিতায়, বিশেষ করে এই সময়ের কবিতায় যে শুচিবায়ুগ্রস্থতা চলে না, এটা তিনি খুব ভালো করেই বোঝেন। তাঁর কবিতায় তাই তৎসম শব্দের পাশাপাশি অনায়াসে চলে আসে লোকায়ত শব্দ, খিস্তি, এবং ইংরেজি শব্দ। আর্বানিটির প্রধান লক্ষণ শ্লেষ-এর ব্যবহারে। বুদ্ধদেব শ্লেষের সাথে মিশিয়ে দেন তীব্র আয়রনি। ফলে তাঁর অধিকাংশ কবিতা চারপাশের অবক্ষয়কে যেমন ব্যাঙ্গ বিদ্রূপে আক্রমণ করে ঠিক তেমন নিজেকেও ছেড়ে দেয় না। বাংলা সাহিত্যের কিছু মূলধারার কবিতার মতো মর্ষকামী নয় তাঁর কবিতা। করুণা প্রার্থনা করে না কারো কাছে। তিনি লেখেন, “তোমাকে ভুলতে না পারার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে রক্তে সিরিঞ্জ ঠেকাই আমি। কোন্নগর প্রতিদিন অল্প অল্প করে ফাঁকা হয়ে আসে। গ্যালিলিও ভুল ছিলেন, শুজাহা বোঝাতে চাইছেন, আসলে এই পৃথিবী খানকিদের চারিদিকে ঘোরে…” সাজানো মেকি সমাজ সম্পর্কের নিভাঁজ বুননে এ এক অন্তর্ঘাত যেন। সমাজের যে আপাত মসৃণতা আমরা সিরিয়াল থেকে শুরু করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের পরতে পরতে দেখতে পাই, বুদ্ধদেব তাঁর কবিতায় সেই বুনটকে নির্মমভাবে ফালাফালা করেন। বেকারত্ব, দারিদ্র, ভাঙা সম্পর্কের যন্ত্রণা, শহুরে ভানসর্বস্বতা, কবি লেখকদের দ্বিচারিতা, কোনোকিছুই তাঁর তির্যক বিদ্রুপের কাছে ছাড় পায় না। সে-অর্থে এইসব বিষয়ের কোনোটাই বাংলা কবিতার বিবর্তনে নতুন নয়। কিন্তু বুদ্ধদেবের কবিতার অনন্যতা এখানেই যে তিনি এই চেনা বিষয়গুলিকে কোনো নৈতিকতার দর্শন বা দার্শনিক ভূমিকা থেকে আক্রমণ করেন না। তিনি সরাসরি আক্রমণে যান। একুশ শতকে এসে এই বিষয়গুলি যে আরও কত ফাঁপা ও অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে সেটাই বলেন একেবারে নিজস্ব, প্রতিস্পর্ধী এক কাব্যভাষায়। কবিতার এই ভাষা বাংলার প্রচলিত সাহিত্যের ধারায় খাপ খাবে না। খাপ খাওয়ানোর প্রয়োজনও নেই কোনো। বুদ্ধদেব নিজেও স্পষ্টতই সেটা চান না। তিনি লেখেন, “…ঘাড় গুঁজিয়া শুধু কবিতা লিখিলেই চলিবে না। টুনটুনি নাড়িয়া সভা-সমিতিতে যোগ দিতে হইবেক। কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? নামটা ঠিকমতো বুঝিয়া লইতে হইবে। কবিসম্মেলনে গিয়া উদ্যোক্তার অ্যাঁড় চাটিতে হইবে। এবং ধান্দাবাজি করিয়া ৩/৪ টা পুরস্কার বাগাইতে হইবে।” বাংলা কবিতার প্রাতিষ্ঠানিক ঊর্ণজাল ছিন্নভিন্ন করার জন্য এই দুর্বিনীত বইটির প্রয়োজন ছিল। আর একটা কথা অবশ্যই বলা দরকার। এই ক্রোধ, এই চূড়ান্ত দ্রোহ, যা এই বইয়ের প্রতিটি কবিতায় ছড়িয়ে আছে, সে-সবের উপরিস্তর ছাড়িয়ে পাঠক যদি আর একটু গভীরে প্রবেশ করেন, দেখবেন, একজন হারতে হারতে না-হারা মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকার কথা বলছেন আজকের সময়ের ভাষায়। লিখছেন, “আমি জানি, চুলে বিলি কাটতে গিয়ে / তুমি আজও সিঁথিতে গোপনে ছুঁইয়ে নাও কবিতার খাতা।”