Janmantar

200.00

In stock

Categories: , Tag:
Share this

Description

প্রয়াত পিতামহের সঙ্গে কথা হত সুরঞ্জনের। সুরঞ্জন কবি। এই একটি মাত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়তো কিছুটা হলেও আন্দাজ দেবে যে এই উপন্যাসটি কোন রাস্তায় এগোতে পারে। স্বনামধন্য নাট্যকার সুপ্রীতি মুখোপাধ্যায়ের এই উপন্যাসটি সেঅর্থে তথাকথিত কবি ও রোম্যান্টিক স্বভাবের মানুষের সঙ্গে রূঢ বাস্তব জগতের যে সংঘাত আমরা সাধারত সাহিত্যের পাতায় পেয়ে থাকি, তার থেকে কয়েক যোজন দূরে অবস্থান করে। এ উপন্যাসের পাতায় পাতায় আমরা দেখি চেনা বাস্তবতার পাশাপাশি এক মহাকাব্যের সম্ভবনা নির্মিত হচ্ছে। সময়টা যে ভাসমান, নিরালম্ব, এবং উৎকেন্দ্রিক, এ ব্যাপারে আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল। আর এমন সমাজে একজন অনুভবপ্রবণ মানুষ যার নিজস্বতা এবং স্বাতন্ত্রবোধ দুটোই অত্যন্ত প্রখর, তাকে যে কী ধরনের মানসিক সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এটা আমাদের সকলেরই জানা। সুপ্রীতি মুখোপাধ্যায়, তাঁর জন্মান্তর উপন্যাসে এই সংকটকে শুধু বিস্তৃত করেন তাই নয়, সুরঞ্জন ও তার পিতামহের কথোপকথনের ওপর ভিত্তি করে তাকে, অতীতবর্তমান ও ভবিষ্যকে একসাথে ধরে রাখে যে কালপ্রবাহ, সেই প্রবাহের মধ্যে উপস্থাপিত করেন। সেই প্রবাহে দৈনন্দিনের সব মুহূর্ত এক ঝটকায় মুখোমুখি হয় তাদের ফেলে আসা অতীতের সঙ্গে। এক অর্থে এই উপন্যাস তাই একক মানুষের শিকড় সন্ধান। আকর্ষ ও বিকর্ষণের এই খেলাকে ধরে রাখে প্রেম। যা সুরঞ্জনের জীবনেও আছে, আর যা তার পিতামহের জীবনেও ছিল। সে শুধু তার রূপ পালটেছে। এ সেই প্রেম যা জীবনকে গ্লানিমুক্ত করে। তাকে মুক্ত করে দেয় জীবনের সব ক্লেদ, সব ম্লানিমা থেকে।  সুপ্রীতি লেখেন, “আমার মাথার ওপরে কোনো আকাশ নেই। নেই পায়ের তলায় স্থির জমিন, শুধু এক মহান উত্তরাধিকারের যাদু আমার হৃদয়ে। আমি নাচি, গা অমৃতধারায় ভেসে যাই। আর এই এক শিকড়ছিন্ন বর্তমান… আমার মাথার চারপাশে খঞ্জনি বাজায়। তারস্বরে চিৎকার করে হৃষ্টচিত্ত দুর্ভিক্ষের কাক। আর মহামারীর শকুনবিস্ফারিত ডানায় ঢাকে আমার ভবিষ্য আকাশ এই ধ্বংসস্তুপ, এই প্রত্নভূমি আমাদের চেনা। চেনা এই নাশক সময়কেও। আর এই পটভূমিতেই ‘জন্মভূমি’ সেই সংলাপের ভাষ্য রচনা করে যার প্রয়োজন এ-সময়ে সবচেয়ে বেশি। নিরাশা নয়। সংলাপ। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক-এর। নৈরাশ্যের সঙ্গে মানুষের স্বপ্নের আর আশার অত্যন্ত জরুরি এই কথোপকথন। আর এই সত্যকথন নিয়েই সৃষ্টি হয় এই উপন্যাস “জন্মান্তর”, যা আমাদের নিজেদেরকে আবার নতুন করে চিনতে সাহায্য করে।