Description
রঙ্গীত মিত্রের “ভালো পাগলের আস্তানা” ভাবে, সুরে, আর মেজাজে, নিজেকে একটু আলাদা করে ফেলতে পারে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুষঙ্গের পাশাপাশি, কবি তাঁর নিজের চারপাশের বাস্তবতাকেও তুলে আনেন কবিতায়। প্রেম আর যাপন, সম্পর্কের ব্যক্তিগত দূরত্ব আর আকাট, নির্মম একটা শহরের বেঁচে থাকাটা তাঁর কবিতায় একজায়গায় এসে মিশে যায়। বাহির আর ভিতরকে এক করে ফেলাটা রঙ্গীত মিত্রের নিজস্বতা। তিনি লেখেন, “আমরা দুজনে নিরাপদে / গোপনীয়তা প্র্যাকটিস করে যাব। / তোমার ইচ্ছেরা / ‘অর্ধেক পরিপূর্ণ গ্লাস’ / অথচ সিগারেট শেষ না হতে হতে তোমার বরের / ফোন এসে যাবে। / তখন ক্লোরোমিন্টভর্তি মুখে / বাড়ি ফিরে যাব যে যার মতো / সেদিন, এই রকম কিছু একটা, বলতে চেয়েছিলে?” সব কিছুই কেমন ঝাপসা। যেন কুয়াশার মধ্যে দিয়ে দেখা এক জগৎ। প্রেম আছে। আছে পরকীয়ার ইশারা। কোনটা সত্যি আর কোনটা যে মিথ্যে সহজে বোঝা যায় না। বস্তুত বোঝার দরকারও যেন নেই কোনো। শহরের একঘেয়ে বিমর্ষ এক জীবনের মধ্যে বাঁচার এক পিপাসা। সে তৃষ্ণা কীসে মিটবে তা-ও স্পষ্ট জানা নেই। যেন স্বপ্ন দেখার ক্ষণ পার করতে করতে, আবার পরের মুহূর্তেই তাকে সমাজ আর কর্তব্যের আর যাবতীয় অনুশাসনের রক্তচোখ আড়াল করতে করতে, মেনে নিতে হবে এই যাপনকেই। চক্রাবর্ত এক জীবন। স্বপ্ন দেখা, ভাসা, আড়াল করা, ফের মেনে নেওয়া এবং আবার, আবার, খোঁয়াড়ে ফিরে যাওয়া। ক্রমশ ছড়িয়ে যেতে থাকা এক একাকিত্ব। রঙ্গীত তাঁর কবিতায় অবসাদ আর নিঃসঙ্গতার পাশাপাশি এই অনিঃশেষ পিপাসাকেই তুলে আনেন বারবার। কোনো উপরিগত দার্শনিকতা নয়। কোনো অভিজ্ঞান দেওয়াও তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তিনি শুধু পাঠকের মনে তাঁর এই অনুভবটুকু পৌঁছে দিতে চান। তাঁর অভিমানী কণ্ঠস্বর যে কতটা ঋজু সেটা বোঝার জন্যে এই একটি পংক্তিই যথেষ্ট, যেখানে তিনি লেখেন, “আমাকে বারবার আঘাত করে সে ভালোবাসা ভোলাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি যে অন্য ধাতুতে গড়া। তুমি যাই করো, আমি বেইমানি করব না।” এই শহরের ক্রূরতা, মিথ্যাচার, নিষ্ফল সম্পর্কের যাপন, এই সবকিছুর মধ্যে যে ভাঙনের ঘূণ অবিরত কাজ করে চলে তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে রঙ্গীত এক ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির ভাষ্য লিখতে থাকেন। আর এভাবেই তাঁর “ভালো পাগলের আস্তানা” অন্য এক সুরে বাজতে থাকে। সে কবিতারা অভিমানী অবশ্যই। কিন্তু একইসাথে জেদি এবং নাছোড়।
Reviews
There are no reviews yet.