Description
“বনভোজন” রিমি দে-র অষ্টম কাব্যগ্রন্থ। ওঁর কবিতা এর আগে যারা পড়েছেন তারা জানেন যে ওঁর কবিতার আপাত নরম, কোমল, ও মসৃণ বহিরঙ্গের আড়ালে কীভাবে আত্মগোপন করে থাকে এক চোরা অন্তর্ঘাত। ঠিক যেভাবে “বনভোজন” নামের নিরীহ অভিমুখ আসলে আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে গভীর, ছায়াঘন ও আলো-আঁধারে ঘেরা এক বনছায়ে যেখানে সাপ, বাঘ, ও আরও অনেক রহস্যময় ইশারা সারাক্ষণ পাঠককে প্ররোচিত করছে। কিসের প্ররোচনা? বলা মুশকিল। খুব স্পষ্ট করে বলা যাবে না, কী আপনাকে টানছে ওই নিষিদ্ধ বিষ অর্জনের দিকে! আবার একই সঙ্গে আপনি তাকে এড়িয়ে যেতেও পারবেন না। এমনই এই কবির কবিতার মোহিনী শক্তি। সচেতন পাঠক একটু মনোযোগী হলেই খেয়াল করবেন রিমি-র প্রায় সব কবিতাতেই ঘুরে-ফিরে আসে বিষধর সাপ ও বাঘের কথা। আমাদের মনে পড়ে যাবে পুরাণ ও ফ্রয়েডিয় মনোবিজ্ঞানের কথা। সেখানেও প্রাচীন কল্পনা আর স্বপ্নের বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে কীভাবে সাপের অনুষঙ্গ ফিরে আসে আদিম কামনা আর যৌনতার রূপকল্পের প্রতীক হিসেবে। রিমি-র কবিতায় বিস্ময়করভাবে উঠে আসে সাদামাটা দৈনন্দিন, আর তারই পাশাপাশি জঙ্গল, সাপ আর বাঘের কথা। পাঠক হিসেবে আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয় না যে এই কবি প্রকৃত অর্থেই স্বাভাবিক রোজকার যাপনের আড়ালে যে বিপন্নতা প্রবহমান তাকেই খনন করে বারবার দেখতে চান নিজেকে। এই খাদের কিনার ঘেঁষে হেঁটে চলাই তাঁর নিজস্ব অর্জন। তিনি লেখেন, “পড়ে থাকি মুখ গুঁজে একা একা চিরচেনা খাদের কিনারে।” আবার অন্য একটি কবিতায় লিখে রাখেন আপাত শান্তি-নিরোধকের পাশাপাশি কেমন করে একটি বিষধর ঘুরতে থাকে। যে কোনো মুহূর্তে যেন এক স্ফুরণ, এক নিঃশব্দ আক্রমণে যে ওই সাজিয়ে রাখা শান্তিকল্যাণকে চুরমার করে দিতে পারে। “দুমুখো সাপটি রাখা আছে ওডোনিলের পাশে।” এভাবেই এই বইয়ের প্রতিটি কবিতায় রিমি খুব শান্তভাবে সংঘাতমুখর হয়ে যান। প্রেম আর প্রেমের আড়ালে যে বিষ, এই দুটি বিপ্রতীপ বিন্দুই যেন তাঁর খুব চেনা। এই দুইয়ের অন্তর্দ্বন্দ্বের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কখনো যদি বর্ম তুলে নেন, কখনো হাতে তুলে নেন গোপন কৃপাণ।
Reviews
There are no reviews yet.