Description
পাপ ও যৌনতাও এক পরিভ্রমণ। ঠিক যেভাবে আত্মশুদ্ধির পথ এক ভ্রমণ, ঠিক সেভাবেই। তফাৎ এটুকুই যে আত্মশুদ্ধির ভ্রমণপথে এক লক্ষ্য আছে। গন্তব্য আছে। আর গন্তব্য দিশা তৈরি করে দেয়। পাপ ও যৌনতার পথে গন্তব্য আছে হয়তো কিন্তু তাৎক্ষণিক। তার শুরু ও শেষের পর্যায় যেন দমবন্ধ করা ঘর। পুনরাবৃত্তে আটকে রাখে। সমাজনির্ভর মানুষ এই যাত্রাপথকে সন্তর্পণে এড়িয়ে চলবেন। কবি-র যাত্রা ঠিক তাদের বিপরীত দিকে। সামাজিক মানুষেরা নিজেকে বাঁধবেন নিগড়ে, অনুশাসনে। কবি নিগড় ভাঙবেন, অন্ধকারকে ডেকে নেবেন স্বেচ্ছায়, নিজের বিপন্নতার মুখোমুখি হবেন বলে। এই আকাঙ্ক্ষা বড়ো দুর্মর। বড়ো বেশি দুর্নিবার। খাদের ধারে নিজেই নিয়ে যাবেন নিজেকে। ঝুঁকে পড়ে দেখবেন আসন্ন মৃত্যুকে। হয়তো আলিঙ্গন করবেন তাকে। কে যেন ভেতর থেকে তাকে ধাক্কা মারবে আর বলবে নিষ্কৃতি নয়, পরিত্রাণ নয়, তোমাকে অতিক্রম করে যেতে হবে মৃত্যুর এই দর্পণ। এই যাত্রা পথ পিচ্ছিল। পতন-উন্মুখ। তবু এটাই এক এবং একমাত্র রাস্তা উত্তরণের। এছাড়া অন্য রাস্তা আর নেই। অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘সিদ্ধার্থ ও তিন যুবক’ এমন এক কবিতার বই যা পাপ ও যৌনতার এই বিপন্নতাকে যেমন একদিকে ধারণ করে থাকে ঠিক তেমনই তার থেকে উত্তরণের রাস্তাটাও নিরন্তর খুঁজে বেড়ায়। কবির নিজের ভাষায়, “তবু পাপ ও যৌনতার মধ্যেকার সাঁকো আমাদের পেরিয়ে যেতে হয়েছিল চোখ বুজে / সেই থেকে অন্ধ হয়ে গেল সবার ডান চোখ, পথ ভুল হতে শুরু করল, / কিশোর ঢুকে পড়ল ভুল অরণ্যে, অরণ্য ভুল করে শঙ্খবিতানের ভেতর / বিতান ভুলবশত শূন্যে ভাসমান কিশোরের আপেল বাগানে”। অরণ্য-র কবিতার উচ্চারণ ক্ল্যাসিকাল। তার কবিতার চলন, গমক, ভাবনা ও কল্পনার স্পাইরাল গতি পাঠককে কখনো একমুখী কোনো রাস্তার হদিশ দেখাবে না। দেহজাত ভাবনা থেকে নিরাকারে পৌঁছোনোর রাস্তা যেমন সরল রেখায় আঁকা যায় না ঠিক তেমনই তাঁর কবিতার প্রকৃতিও সরল রেখায় উত্তর খোঁজে না। অরণ্য তাই ‘পাপ ও যৌনতার মধ্যেকার সাঁকো’ পেরিয়ে যেতে যেতে যেখানে পৌঁছে দেন আমাদের সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা দেখি সিদ্ধার্থের চোখও জলে ভরে আছে। আত্মশুদ্ধির পথ অসংলগ্নতার পথ নয়। বিচ্ছিন্নতারও নয়। প্রকৃত অর্থেই সে পথ পাপ ও পূর্ণতার একাত্ম হওয়ার পথ। সে পথের শেষে এসে ‘সিদ্ধার্থ ও তিন যুবক’-এর কবি তাই আমাদের আলোড়িত করে বলতে পারেন, “ম্লানিমা ক্ষমা করো, জন্ম ক্ষমা করো আমাদের / এ কী সিদ্ধার্থ, তোমার চোখেও জল!” সব পাপ ও অনাচার এসে কোথায় যেন ঈশ্বরের অপার করুণাধারায় শেষ পর্যন্ত মিলে যায়।
Reviews
There are no reviews yet.